নিজে কাঁদলেন, কাঁদিয়ে গেলেন সবাইকে। ফরিদপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে এ ধরনের বেদনা বিধুর দৃশ্য ইতোপূর্বে দেখা গেছে কিনা বলা যাবে না।
একটি মানুষ মাত্র পৌনে তিনটা বছর এখানে ছিলেন, এ সীমিত সময়ে তিনি যে এভাবে মানুষের মন জয় করবেন তা কেউ বুঝতে পারেনি।
মানুষের এতটা প্রিয় হতে পারে কেউ না দেখলে বোঝা যেত না। আর এ ভালোবাসাই অশ্রু হয়ে সকলের চোখ বেয়ে নেমে এলো।
এদৃশ্য ছিল গত দু’তিন দিন ধরে ফরিদপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে। ফরিদপুরের সদ্য বিদায়ী জেলা প্রশাসক উম্মে সালমা তানজিয়ার বিদায়ী অনুষ্ঠানে মানুষের ভিড় ও তাদের অশ্রুসজল নয়ন বলে দিয়েছিল তারা কতটা আপন করে নিয়েছিল জেলা প্রশাসককে। তাই তার বিদায় তাদের চোখে বাধভাঙ্গা জোয়ারের মতো অশ্রু এনে দিয়েছিল। বিদায় ক্ষণটা ছিল এককথায় অভূতপূর্ব, অবিস্মরণীয়।
সরকারি চাকরিজীবীরা আসবেন, আবার বদলি হয়ে অন্যত্র চলে যাবেন। এটাই স্বাভাবিক। সরকারি চাকরির রীতিনীতি যেন এমনই। কিন্তু উম্মে সালমা তানজিয়া নিজের চাকরির সীমানা পেরিয়ে গেলেন তার কর্মের মধ্য দিয়ে। তাই তার বিদায়ক্ষণে সরকারি দপ্তরগুলোর কিছুটা আনুষ্ঠানিকতা থাকলেও বিভিন্ন সমাজসেবামূলক প্রতিষ্ঠান, এনজিও, স্কুল-কলেজসহ আরও কত শত মানুষের পক্ষ থেকে আসা ফুল বলে দিচ্ছে কতটা জনপ্রিয় ছিলেন তিনি। ফুলে ফুলে ভরে গেছে ফরিদপুরের জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ও তার বাংলো।
সদ্য পদোন্নতি পাওয়া বর্তমান সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব উম্মে সালমা তানজিয়া ফরিদপুরের জেলা প্রশাসকের (ডিসি) দায়িত্ব পালন শেষে সোমবার সকালে নবাগত জেলা প্রশাসক অতুল সরকারের হাতে দায়িত্ব তুলে দিয়ে বেলা ১১টার দিকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন।
স্থানীয়দের ধারণা, সাবেক জেলা প্রশাসক ফরিদপুরের সীমানা পার হয়েও হয়তো বার বার তাকাচ্ছিলেন ফরিদপুরের দিকে।
বিদায়টা কেমন হয় সরকারি অন্যসব চাকরিজীবীদের যেন সেই বিষয়টিও নমুনা হিসেবে রেখে গেলেন উম্মে সালমা তানজিয়া। গত এক সপ্তাহে আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিকভাবে শতাধিক বিদায় অনুষ্ঠান হয়েছে। এতো বিদায় অনুষ্ঠান, এতো ফুল আগে কখন দেখেনি কোনো জেলা প্রশাসক। আর তাকে নিয়ে আয়োজিত এমন কোনো বিদায় অনুষ্ঠান নেই যেখানে মানুষ কাঁদেনি। শুধুকি ফরিদপুর জেলার মানুষ কেঁদেছেন, পাশাপাশি কেঁদেছেন জেলা প্রশাসক উম্মে সালমা তানজিয়াও। বিদায় বেলায় এতদিনের সহকর্মীরাও কেঁদেছেন তাকে জড়িয়ে ধরে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সর্বদা সজাগ ছিলেন ডিজিটাল বাংলাদেশের এ সারথি। ২৪ ঘণ্টা ফেসবুক ম্যাসেঞ্জার থেকে তথ্য নিয়েছেন এবং সে অনুযায়ী দ্রুত ব্যবস্থা নিয়ে তুমুল জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন উম্মে সালমা তানজিয়া। তার কর্মের কারণেই স্মরণকালের স্মরণীয় বিদায়টি পেয়েছেন তিনি।
প্রসঙ্গত, উম্মে সালমা তানজিয়া রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন। স্থানীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সমাপ্ত করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি ১৯৯৮ সালে বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারে সহকারী কমিশনার হিসেবে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় যোগদান করেন। এরপর বিভিন্ন জেলায় সহকারী কমিশনার, সহকারী কমিশনার (ভূমি), জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
সিরাজগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৩ সালের মার্চে উপ-সচিব হিসেবে পদোন্নতি পান। পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একসেস টু ইনফরমেশনে (এটুআই), স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব, এরপর ফরিদপুরের জেলা প্রশাসকের দায়িত্ব পালন করেন। গত ১৬ জুন উপ-সচিব পদ থেকে পদোন্নতি পেয়ে যুগ্ম-সচিব হয়েছেন তিনি। আগামীকাল ২৫ জুন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে যোগদান করবেন।